আত্মসাক্ষাৎকার এবং ধ্যান

আত্মসাক্ষাৎকার এবং ধ্যান

নিজের প্রকৃত সত্তার একটি অনন্য স্বতঃস্ফূর্ত উপলব্ধি

আত্মসাক্ষাৎকার হলো প্রথমবার বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়া

শ্রী মাতাজী কুন্ডলিনী (সংস্কৃত ভাষায় এর অর্থ কুণ্ডলীকৃত) জাগরণের প্রাচীন প্রক্রিয়াকে সহজ যোগ ধ্যানের ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। অতীতে, এই অভ্যন্তরীণ আধ্যাত্মিক শক্তির জাগরণ কঠোর শুদ্ধিকরণ ও তপস্যার প্রচেষ্টার মাধ্যমে শুধুমাত্র কিছু মানুষের দ্বারাই অর্জন করা সম্ভব হত।

শ্রী মাতাজী এই শক্তিকে জাগ্রত করার একটি স্বতঃস্ফূর্ত পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন, যার জন্য কোনো পূর্ব জ্ঞান বা আধ্যাত্মিক অনুশীলনের প্রয়োজন নেই। তিনি এই জাগরণের নাম দিয়েছিলেন আত্মসাক্ষাৎকার। কোনোরূপ অর্থ খরচ বা কিছু বিশেষ অধ্যয়ন না করে অথবা কারো শিষ্যত্ব গ্রহণ ছাড়াই এই স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ সহজেই অন্যদেরকে প্রদান করা যেতে পারে। এই ঘটনাটিকে একটি মোমবাতির সাথে তুলনা করা যেতে পারে যা প্রজ্বলিত করা হয়েছে এবং এটি অন্য একটি মোমবাতিকেও প্রজ্বলিত করতে পারে।

শ্রী মাতাজী ব্যাখ্যা করেছেন যে আত্মসাক্ষাৎকার ছাড়া ধ্যান হল ইঞ্জিন চালু না করে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করার মতো। শুধুমাত্র স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে বা এক্সিলারেটারে চাপ দিয়ে আপনি কোথাও যেতে সক্ষম হবেন না। একইভাবে, ধ্যানের সমস্ত প্রচেষ্টা নিষ্ফল হয়ে যায় যতক্ষণ না কেউ কুন্ডলিনী জাগরণের মাধ্যমে নিজের প্রকৃত সত্তাকে উপলব্ধি করতে পারে এবং নিজের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম দেহযন্ত্রের অবস্থা অনুভব করে।

আত্মসাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কুন্ডলিনী (সূক্ষ্ম অভ্যন্তরীণ শক্তি) সম্পর্কে সচেতন হন যা প্রতিটি মানুষের মধ্যে মেরুদণ্ডের গোড়ায় অবস্থান করে। এই সূক্ষ্ম শক্তি বহু প্রাচীন সংস্কৃতিতে পরিচিত এবং তাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে। প্রাচীন গ্রীকরা এই হাড়ের নাম "ওস স্যাক্রাম" (অর্থাৎ "পবিত্র অস্থি") দিয়েছিল যা এই পবিত্র শক্তির ধারক হিসাবে কাজ করে। জাগরনের পরে যখন এই কল্যাণময়, লালন-পালনকারী শক্তি সূক্ষ্ম দেহযন্ত্রের মধ্য দিয়ে উত্থিত হয়, হৃদয়ে বসবাসকারী আমাদের প্রকৃত অন্তর্নিহিত সত্তাকে (আত্মাকে) স্পর্শ করে ও আলোকিত করে, এবং মাথার উপরের অংশে ব্রহ্মরন্ধ্র থেকে নির্গত হয়, যার ফলে আমাদের চিত্ত মহত্তম গৌরবের দিকে, নিঃশব্দ ধ্যানের অনায়াস অবস্থায় উন্নীত হয়।

একজন ব্যক্তি সাধারণভাবে কুণ্ডলিনী শক্তির প্রকাশকে শীতল বাতাস হিসাবে মাথার ওপরে, সেইসাথে দুই হাতের তালুতে অনুভব করতে পারে।
এই শক্তি, সহজ যোগ ধ্যান অনুশীলনের মাধ্যমে বজায় থাকে, যা আমাদের দেহযন্ত্রে একটি নিরাময়কারী এবং ভারসাম্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এছাড়াও এটি পুনরুদ্ধারমূলক অবস্থাকেও সহজতর করে যা চিন্তাশূন্য সচেতনতা নামে পরিচিত [1], যে অবস্থায় মন স্থির থাকা সত্বেও ব্যক্তি নিজের পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে সচেতন থাকে। যে বিষয়টি প্রাচীন যোগ ধ্যান অনুশীলনের বিভিন্ন রূপ থেকে সহজ যোগ ধ্যানকে আলাদা করে তা হল যে পূর্বে সাধকদের বহু বছর ব্যয় করে, শেষ পর্যন্ত আত্মসাক্ষাৎকার অর্জনের জন্য একজন গুরুর নির্দেশনায় তাদের সূক্ষ্ম দেহযন্ত্রকে শুদ্ধ করতে হতো। শ্রী মাতাজী এটিকে সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছেন এবং আমাদের সূক্ষ্ম দেহযন্ত্রকে প্রথমে আলোকিত করে তারপরে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ধ্যানে নিমজ্জিত করার অভিজ্ঞতা দিয়েছেন।

এর সরলতা এবং সহজ উপলব্ধির কারণে, হাজার হাজার মানুষ সহজ যোগের মাধ্যমে তাদের আত্মসাক্ষাৎকার লাভ করেছে। 100 টিরও বেশি দেশে সহজ যোগ ধ্যান কেন্দ্রগুলি এই সরল কার্যকরী ধ্যানের মাধ্যমে অনুশীলনকারীদের ক্রমাগত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সহায়তা প্রদান করে থাকে। ইতিবাচক ফলাফল সহ কর্পোরেশন, স্কুল, হাসপাতাল, কারাগার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও এটি চালু করা হয়েছে।

সহজ যোগের মাধ্যমে আত্মসাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা, তাদের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে যারা প্রতিদিনের ধ্যানের জন্য সামান্য সময়ও ব্যয় করেন। এটি চাপ এবং ক্লান্তি হ্রাস করে, মানসিক ভারসাম্যের পুনরুদ্ধার করে এবং এমনকি সবচেয়ে উত্তাল পরিস্থিতিতেও একজন ব্যক্তিকে শান্তি ও সন্তুষ্টির অনুভূতি প্রদান করে।

প্রকৃতপক্ষে, আত্মসাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতাটি এতটাই সরল এবং অনায়াস যে কোনো ব্যক্তি, যেখানে অনলাইন ইন্টারনেট সংযোগ আছে, সে আরাম করে নিজের ঘরে বা অফিসে থেকেও এটির উপলব্ধি পেতে পারে।

আমরা আমাদের পাঠকদের আত্মসাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা নিতে এবং শান্তি, সম্প্রীতি এবং ভারসাম্যের একটি নতুন আভ্যন্তরীণ যাত্রা শুরু করার জন্য আমন্ত্রণ জানাই।

এখন অনেকেরই এই প্রশ্ন জাগে,আমাকে জিজ্ঞেস করে যে, “মা, যদি এটা এতটাই সহজ হয় আগে কঠিন ছিল কেন?” এটা কখনোই কঠিন ছিল না। শিবাজী মহারাজের গুরু রামদাস স্বামীকে কেউ জিজ্ঞেস করেছিল, “কুণ্ডলিনী শক্তি জাগ্রত হতে কত সময় লাগে?” তিনি উত্তর দিলেন, “তৎ ক্ষন” অর্থাৎ সেই ক্ষণেই। তবে এটা দেওয়ার জন্য একজন ব্যক্তি থাকা উচিত, এবং গ্রহণ করার জন্যও একজন ব্যক্তি থাকা উচিত। এর আগে, দেওয়ার জন্য অনেক লোক থাকতে পারে তবে পাওয়ার জন্য খুব কম লোক ছিল। আজ, হাজার হাজার মানুষ আছে গ্রহণ করার জন্য; যে কারণে এটি সহজ হয়ে উঠেছে।

1.^ ডঃ রমেশ মনোচা, 'ধ্যানের কি একটি নির্দিষ্ট প্রভাব আছে?: মানসিক নীরবতা ভিত্তিক সংজ্ঞার একটি পদ্ধতিগত পরীক্ষামূলক মূল্যায়ন' (এন. এস. ডাব্লু বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া 2008); ই-বুক: 'সাইলেন্স ইওর মাইন্ড' হ্যাচেট অস্ট্রেলিয়া 2013 দ্বারা প্রকাশিত।

Explore this section